১৩১৮ ফসলি সনে লেখক আনন্দনাথ রায় তার 'বারভূঁইয়া' গ্রন্থে লিখেছে- 'আকবর বাদশাহর রাজত্বকালে হিন্দু সম্প্রদায় বাদশাহের কাছে জ্ঞাপন করে, আমাদের ধর্মকর্ম সম্পর্কীয় অনুষ্ঠানে হিজরি সন ব্যবহার করতে ইচ্ছা করি না। আপনি আমাদের জন্য পৃথক সন নির্দিষ্ট করে দিন। আকবর হিন্দু প্রজার মনোরঞ্জনার্থে হিজরি সন থেকে দশ-এগার বছর কমিয়ে এলাহি সন নামে একটি সনের প্রচলন করেন। যা আমাদের বঙ্গদেশের সন বলে চলে আসছে। (সূত্র: যায়যায়দিন http://goo.gl/Pi1iFq)
অর্থাৎ ইসলামবিদ্বেষী বাদশাহ আকবর এই বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যভিত্তিক ফসলী সনটি চালু করেছিল ভারতবর্ষে হিজরী সনের প্রচলনকে বাতিল করতে। হিন্দুরাও তাদের ইসলামবিদ্বেষী মানস চরিতার্থ করতে তাদের হাতের পুতুল বাদশাহ আকবরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া এই সনটিকে তাদের ধর্মের সাথে একীভূত করে নেয়। এই পহেলা বৈশাখ হচ্ছে হিন্দু-উপজাতি এদের বহু পূজা আয়োজনের দিন। নিম্নে পহেলা বৈশাখে যেসব পূজা পালন করে হিন্দুরা, তার একটি সচিত্র বিবরণ দেয়া হলো
১) হিন্দুদের গণেশপূজা: হিন্দুদের নিয়ম হচ্ছে, যে কোন কাজ শুরু করার সময়ে গণেশপূজা করে শুরু করা। পহেলা বৈশাখ যেহেতু বছরের প্রথম দিন, সেহেতু হিন্দু ব্যবসায়ীরা এই দিনে নতুন বছরের ব্যবসা শুরু করার জন্য গণেশপূজা করে তারপর হালখাতা খুলে থাকে।
২) হিন্দুদের ঘটপূজা: হিন্দুরা পহেলা বৈশাখের দিনে একটি মাটির ঘড়া বা ঘটের ওপর ছবি, স্বস্তিকাচিহ্ন ইত্যাদি এঁকে তার পূজা করে থাকে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে হিন্দুদের পূজায় ব্যবহৃত একটি ঘটের ছবি দেয়া হলো।
৩) হিন্দুদের সিদ্ধেশ্বরী পূজা: হিন্দুদের কালীদেবীকেই মূলত ‘সিদ্ধেশ্বরী’ বলে। উইকিপিডিয়ায় রয়েছে যে, “ঈশা খাঁর সোনারগাঁয় ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম 'বউমেলা'। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজোর জন্য এখানে সমবেত হয়।”
৪) হিন্দুদের বউমেলা: উইকিপিডিয়ায় রয়েছে যে, “বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই বউমেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন। সন্দেশ-মিষ্টি-ধান দূর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফলমূল নিবেদন করে ভক্তরা। পাঁঠাবলির রেওয়াজও পুরনো। বদলে যাচ্ছে পুরনো অর্চনার পালা। এখন কপোত-কপোতি উড়িয়ে শান্তির বার্তা পেতে চায় ভক্তরা দেবীর কাছ থেকে। বউমেলায় কাঙ্ক্ষিত মানুষের খোঁজে কাঙ্ক্ষিত মানসীর প্রার্থনা কিংবা গান্ধর্ব প্রণয়ও যে ঘটে না সবার অলক্ষে, তা কে বলতে পারবে।”(http://bn.wikipedia.org/wiki/পহেলা_বৈশাখ)
উল্লেখ্য, ‘গান্ধর্ব প্রণয়’ বলতে বোঝানো হয়, যদি দুইজন পুরুষ মহিলার একে অপরকে ভালো লেগে থাকে, তাহলে তারা বিবাহ সম্পর্ক ব্যতিরেকে হিন্দুরীতি অনুযায়ী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। হিন্দুদের প্রতিটি পূজা কিংবা মেলাতেই মহিলাপুরুষের মেলামেশা সম্পর্কিত এধরণের অসামাজিক কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়।
৫) হিন্দুদের ঘোড়ামেলা: উইকিপিডিয়ায় রয়েছে যে,“সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত যামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিত এবং সে মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তার স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ কারণে লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নৌকায় খিচুড়ি রান্না করে রাখা হয় এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই কলাপাতায় সঙ্গে তা ভোজন করে। সকাল থেকেই এ স্থানে লোকজনের আগমন ঘটতে থাকে। শিশু-কিশোররা সকাল থেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকে মেলায় আসার জন্য। এক দিনের এ মেলাটি জমে ওঠে দুপুরের পর থেকে। হাজারো লোকের সমাগম ঘটে। মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও সার্কাসের আয়োজন করা হয়। নানারকম আনন্দ-উৎসব করে পশ্চিমের আকাশ যখন রক্তিম আলোয় সজ্জিত উৎসবে, যখন লোকজন অনেকটাই ক্লান্ত, তখনই এ মেলার ক্লান্তি দূর করার জন্য নতুন মাত্রায় যোগ হয় কীর্তন। এ কীর্তন হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। ”
৬) হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, নীলপূজা, চড়কপূজা, গম্ভীরাপূজা, কুমীরের পূজা, অগ্নিনৃত্য: উইকিপিডিয়াতে রয়েছে যে-“চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিনে তথা চৈত্রসংক্রান্তিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। এ পূজার অপর নাম নীল পূজা। গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে "বুড়োশিব" নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারানো বা হাজারা পূজা করা।
এই সব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো তা প্রচলিত রয়েছে।” (http://bn.wikipedia.org/wiki/চড়ক_পূজা)
অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ হলো একান্তই হিন্দুদের নিজস্ব দিবস, নিজস্ব উৎসব। উপরের যেসব উৎসবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে পহেলা বৈশাখের, তা মূলত গ্রাম্য হিন্দুদের উৎসব। ঘটা করে প্রথম বাংলা নববর্ষ পালন করা হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় । ব্রিটিশরাজের বিজয় কামনা কে ১৯১৭ সালে পহেলা বৈশাখে হোমকীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করে কলকাতার হিন্দু মহল । আবার যখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বাজল,তখন হিন্দু সুবিধাবাদী গোষ্ঠি ১৯৩৮ সালে উত্সব করে পহেলা বৈশাখ পালন করল । পূজায় পূজায় ইংরেজদের জন্য বিজয় কামনা করল । (সূত্র: প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে বাংলা বর্ষবরণ, মুহাম্মাদ লুত্ফুর হক, দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ২০০৮)
সুতরাং ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের একান্তই নিজস্ব উৎসব। এর সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক তো নেই-ই, ‘বাঙালি সংস্কৃতি’রও খুব বেশি সম্পর্ক নেই। কারণ বাদশাহ আকবর ছিল অবাঙালি, তার নিকট আবদার করে ফসলি সন তথা পহেলা বৈশাখের উৎসব আদায় করে নেয়া দিল্লীর হিন্দু জনগোষ্ঠীও ছিল অবাঙালি। পহেলা বৈশাখের সাথে সম্পর্ক রয়েছে ভূত-প্রেতে বিশ্বাসের, পুনর্জন্মবাদের, সর্বোপরি হিন্দুধর্মের। সুতরাং পহেলা বৈশাখ যে পালন করবে, সে আর মুসলমান থাকতে পারবে না।