Loading...

পবিত্র শবে বরাত পালন বিষয়ে সৌদি ওহাবীরা মুসলমানগণের জন্য দলীল নয়; ইসলামী শরীয়তই মুসলমানগণের দলীল

ইদানিং সৌদি ওহাবী মৌলভী এবং তাদের খুদ-কুড়া খাওয়া দেশী-বিদেশী উলামায়ে ছু গং পত্র-পত্রিকা মিডিয়া অনলাইনে ব্যাপক অপপ্রচার করে বলছে, পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ নেই | সৌদি গ্রান্ড মুফতি ও তাদের অনুসরণীয় মুরব্বী গং শবে বরাতের অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পায়নি | নাঊযুবিল্লাহ!

এখন আমরা যদি এদেরকে জিজ্ঞাসা করি, তোমরা রাজতন্ত্র, ছবি তোলা, ভিডিও করা, পবিত্র হারামাইন শরীফাইনে সিসিটিভি লাগানোর তরীকা, সৌদি আরবে হাজার দেড়েক অশ্লীল টিভি চ্যানেল বিস্তারের মওকা, বিধর্মী বিজাতীদের সাথে আন্ত;ধর্ম সম্মেলন করে বন্দুত্ব করার কথা, মুসলমান দেশে বাতিল কাফিরদের ঘাটি বসানোর উদাহরণ ইসলামের কোথায় খুঁজে পেলে- এছাড়া আরো অনেক প্রশ্ন করা যায় যার কোন শরীয়তসম্মত উত্তর তোমরা কস্মিনকালেও দিতে পারবে না | যেহেতু মুসলমানগণ শবে বরাত পালন করলে রহমত বরকত হাসিল করে হিদায়েত হয়ে যাবে তাই শয়তানের শিং সৌদী ওহাবীদের একটাই ধ্যান খেয়াল কিভাবে মুসলমানগণকে এই রহমত বরকত থেকে মাহরুম রাখা যায় | কোন মুসলমান যদি এদের জাহিলী কথাবার্তা যুক্তি শুনে তবে তার বিভ্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক | এজন্য মুসলমানগণ পবিত্র শবে বরাত এর দলীল কখনোই সৌদি ইহুদী প্ররোচিত ও হেমপার সৃষ্ট ওহাবী বা তাদের দালালদের কাছে তালাশ করবে না | তালাশ করতে হবে ইসলামী শরীয়তে | আর ইসলামী শরীয়ত এর প্রধান দুটি উৎস পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ এ পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে | সেগুলো দেখেই প্রকৃত দ্বীনদার ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রায় পনেরশত বৎসর যাবত খুব উত্তমভাবে পবিত্র শবে বরাত পালন করে আসছেন | আর সেগুলোর অপব্যাখ্যা করে ওহাবীরা লানতগ্রস্থ হয়েছে |

# কুরআন শরীফ ও তাফসীরগ্রন্থে শবে বরাতঃ
কুরআন শরীফ-এ সূরা দুখান-এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত লাইলাতুম মুবারাকাহ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান যা মশহুর শবে বরাত |
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক বরকতপূর্ণ রাত্রিতে নাজিল করেছি | অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপূর্ণ কাজসমূহের বন্টন করা হয় তথা বন্টনের ফায়সালা করা হয় |”
(সূরা আদ দোখান/৩-৪)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত)কে বুঝানো হয়েছে তা সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থেই বর্ণিত রয়েছে |
ليلة مباركة এর ব্যাখায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খণ্ডের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال عكرمة هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيه امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد. روى البغوى عن محمد بن الميسرة بن الاخفس ان رسول الله صلى عليه وسلم قال يقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له ولقد اخرج اسمه فى الموتى.
وروى ابو الضحى عن ابن عباس ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبن ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত | এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়সালা করা হয় কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়সালা করা হয় | অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না | হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর থেকে | তিনি বলেন, ‘রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয় | এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে |’
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ্ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয় |”
(ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খণ্ড/১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খণ্ড ৩৬৮, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খণ্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর, মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, আবী সউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, গরায়িব, মাদারিক)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে | কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব | কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব | সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ্ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ, মিরকাত ৩য় খণ্ড ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খণ্ড ২৯৩-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
কাজেই, শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার বা বিরোধিতা করা কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফকেই অস্বীকার করা, যা কাট্টা কুফরী | আর যে কুফরী করে সে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হিসেবে গণ্য |