বাতিল ফির্কারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালায় সূরা দুখানের লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা নাকি লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান তথা শবে বরাতকে বুঝানো হয়নি, বরং শবে কদরকে বুঝানো হয়েছে। আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের বিশ্ব বিখ্যাত তফসীর সমূহ থেকে স্পষ্ট ভাবে জেনে নিই লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কি বুঝানো হয়েছে।
বে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
(১) এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে উল্লেখ আছে-“বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।( তাফসীরে কুরতুবী-এর ১৬তম খ-ের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠা)
(২) এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরে তাবারী”তে উল্লেখ আছে- “মুফাস্সিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত।” (“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠা)
(৩) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-“অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।” (“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ২৮৭ পৃষ্ঠা)
(৪) সকল মাদ্রসায় পঠিত কিতাব “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”- উল্লেখ আছে-
“অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।” (“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” ৪১০ পৃষ্ঠা)
এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে- “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে।
বিস্তারিতঃ https://goo.gl/GjnS3O
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরনীয় মুফাসসিরীণগণ উনারা ‘সূরা দুখানে’ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ‘শবে বরাত’ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অতএব শবে বরাতের বিরোধিতা করা বা শবে বরাতকে অস্বীকার করা মূলত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।