Home
নববর্ষ
পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখে নারী নিপীড়নের ঘটনার পর হঠাৎ অনলাইন ফেইসবুকে এক ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে
পহেলা বৈশাখে নারী নিপীড়নের ঘটনার পর হঠাৎ অনলাইন ফেইসবুকে এক ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে
পহেলা বৈশাখে নারী নিপীড়নের ঘটনার পর হঠাৎ অনলাইন ফেইসবুকে এক ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যে সকল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- কিছু কিছু মেয়ে নানান অদ্ভূত ধরনের কথা বলছে, যেমন:
১) নারীরা দুর্বল নয়, সাথে ছুরি-কাচি-মরিচের গুড়ো রাখো
২) লাথি মেরে পুরুষদের ইয়ে গেলে যাও
৩) সাথে কনডম রাখতে হবে, কেউ রেপ করতে আসলে কনডম দিতে হবে,
৪) আমি ন্যাংটা থাকলে তোমার কি, তুমি আগে নিজের মন ঠিক করো
৫) কোন মেয়ে এখন থেকে পুরুষ জন্ম দেবে না,
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ কথাগুলোর প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। অনেক পুরুষের এটা দেখে গা-জ্বালা শুরু করছে, কেউ তার প্রতিক্রিয়ায় ভিডিও তৈরী করছে, কেউবা চিন্তা করছে এ ধরনের মেয়েদের রেপ করাই দরকার।
যাই হোক, এ সম্পর্কে বলতে হয়, কেউ যদি এ ভিডিওগুলো দেখে ভাবেন এটা এমনি এমনি প্রতিবাদ স্বরূপ নারীরা বের করছে, তবে ভুল করবেন। এ ভিডিও কোন সাধারণ নারী রাগবশত: বের করেনি, এই ভিডিওগুলো বের করার পেছনে একটি বিশেষ মহল কাজ করছে, যাদের রয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য।
এখন আপনি বলতে পারেন.....“কারা কাজটি করছে ?? আর কোন উদ্দ্যেশেই বা কাজ করছে।”
এর রহস্য জানতে হলে আপনাকে নারীবাদ বা Feminism সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কথিত নারীবাদ বা Feminism হচ্ছে তিন প্রকার:
১. উদার নারীবাদ (Liberal Feminism)
২. উগ্র নারীবাদ (Radical Feminism)
৩. সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ (Socialist and Marxist Feminism)
তিন নম্বর মানে সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ (Socialist and Marxist Feminism) এর বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। এতদিন বাংলাদেশে যে নারীবাদ প্রচালিত ছিলো সেটা হচ্ছে- প্রথম শ্রেনীর নারীবাদ মানে উদার নারীবাদ (Liberal Feminism)। কিন্তু এ ভিডিওগুলোর মাধ্যমে একটি কমিউনিটি বাংলাদেশে উগ্র নারীবাদ (Radical Feminism) চালু করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা কাজটি করছে, তারা অবশ্যই বিশেষ প্রশিক্ষিত, যারা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতেই মাঠে নেমেছে। এক্ষেত্রে তারা আশ্রয় নিয়েছে পহেলা বৈশাখের ঘটনাকে।
এখন আপনি বলতে পারেন, উদার নারীবাদ (Liberal Feminism) এবং উগ্র নারীবাদ (Radical Feminism) টা কি ??
উদার নারীবাদীরা যে বিষয়গুলোর জন্য আন্দোলন করে থাকে
ক) নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা বিধাণের দাবি করা,
খ) যৌতুক/এসিড বিরোধী আইন প্রণয়নের দাবি তোলা,
গ) পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে বলা,
ঘ) মহিলাকোটা চালুর পক্ষে বলা,
এক্ষেত্রে তারা যে শব্দগুলো ব্যবহার করে: নারী মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি।
চরম নারীবাদ বা Radical Feminism এর ক্ষেত্রে আন্দোলনাকারী নারীরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন করে থাকে:
ক) পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে ঘৃণা করতে শেখানো,
খ) নারীদের আচরণ পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করা
গ) নারীদের শারীরিক দুর্বলতার বিষয়টি মানতে না চাওয়া
ঘ) নারী-পুরুষের সম্পর্ক অস্বীকার করা
ঙ) মাতৃগর্ভ ব্যতিত অন্যপন্থায় শিশু জন্ম দিতে বলা
চ) পুরুষ-নারী নয়, বরং নারী-নারী পরিবার গঠন করতে উৎসাহিত করা।
সাধারণত ইসলামী দেশগুলোতে উদার নারীবাদ (Liberal Feminism) বেশি দেখা যায়। এবং ইউরোপ-আমেরিকা চরম নারীবাদ বা Radical Feminism বেশি মাত্রায় দেখা যায়। কিছুদিন আগে অবশ্য ট্রেনে এক নারী ধর্ষণকে উপলক্ষ করে ভারতেও উগ্র নারীবাদ বা Radical Feminism এর উত্থ্যান ঘটেছে।
এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, উগ্রনারীবাদের ফলাফলটা কি ??
সমাজে উগ্রনারীবাদের ফলাফলটা অনেক কঠিন। বিশেষ করে উদারবাদ থেকে অনেক বেশি ক্ষতিকর। বিষয়টা বুঝতে হলে, আপনাকে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক ও ধর্মপ্রাণদের মধ্যে দ্বন্দ্বটা বুঝতে হবে। বর্তমান সময়ে যে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক (রেডিক্যাল নাস্তিক) দেখা যায়, তাদের কাজ হচ্ছে ধর্ম নিয়ে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করা, এদের কাজ- ধার্মীকশ্রেণীকে ক্ষেপিয়ে সমাজে খুনোখুনি ও বিশৃঙ্খলতা তৈরী করা। ঠিব একইভাবে যখন উগ্রনারীবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন সমাজে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও মারামারি খুনোখুনি সৃষ্টি করবে। যেমন:
১) এ ধরণের উগ্রনারীবাদ হচ্ছে উস্কানিমূলক, এর মাধ্যমে নারীনির্যাতন হ্রাস করা তো দূরের কথা, বরং তা কয়েকগুণ গতিতে বৃদ্ধি পাবে। কারণ দেখা যাবে, অনেক পুরুষ উগ্র নারীবাদীদের দ্বারা অপমানিত হয়ে, প্রতিশোধমূলকভাবে নারী নির্যাতন শুরু করবে।
২) নারী-পুরুষ মিলেই সমাজ, কিন্তু এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক কাজ শুরু হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
৩) পুরুষদের মধ্যেও নারী বিদ্বেষ তৈরী হতে পারে।
৪) নারী সমকামীতা তথা লেসবিয়ানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
৫) সমাজে বিবাহের হার কমে যাবে, ফলে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। পশ্চিমা বিশ্বে অধিকাংশ নারী এ মতবাদের কারণে ঘর-সংসারে বিশ্বাসী হয় না ।
৬) নারী কোন নিদ্দিষ্ট পুরুষের অধিনে থাকবে না, ফলে সমাজে ব্যাপকহারে ব্যাভিচার গণহারে ছড়িয়ে পড়বে।
যারা এ ভিডিও-ছবিগুলো ছড়াচ্ছে, সেই বিশেষ গোষ্ঠীটিকে চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা জরুরী। কারণ এটা নিশ্চিত কোন বিশেষ মহলের ইশারায় সমাজকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এ কাজটি করে যাচ্ছে তারা।