যাদের নসীবে পবিত্র শবে বরাত নেই

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শবে বরাতে সকল উম্মতে হাবীবী উনাদেরকে ক্ষমা করেন। তবে খালিছ তওবা ব্যতীত সাত শ্রেণীর লোকের শবে বরাত নছীব হবে না। তারা হলো- প্রথমত, জ্যোতিষ-যাদুকর। দ্বিতীয়ত, মাদক দ্রব্য সেবনকারী। তৃতীয়ত, ব্যভিচারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি। চতুর্থত, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদকারী। পঞ্চমত, চোগলখোর তথা একজনের কথা অপর জনের নিকট মিথ্যা বলে ফিতনা সৃষ্টিকারী। ষষ্ঠত, শরয়ী কারণ ব্যতীত এক মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক কথা বন্ধ রাখা ব্যক্তি। সপ্তমত, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।”

আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি কোনো গণক, জ্যোতিষ, ভবিষ্যৎ বক্তা বা যাদুকরের নিকট যাবে, কোনো বিষয় জিজ্ঞাসা করবে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোনো ইবাদত -বন্দেগী কবুল হবে না। আর যদি তাদের কথা বিশ্বাস করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ! কাজেই, গণক, জ্যোতিষ, ভবিষ্যৎ বক্তা, যাদুকর, রাশিফল, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব প্রভৃতি হতে হিফাযত থাকতে হবে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মাদক দ্রব্যের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তির জন্য লা’নত।” নাউযুবিল্লাহ! অ্যালকোহল, গাজা, আফিম, কোমল পানীয়, বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা, নেশা জাতীয় দ্রব্য, শরাব ইত্যাদি সবই মাদকের অন্তভুক্ত। এগুলো হতে সামান্য হোক আর বেশি হোক যতটুকুই গ্রহণ করুক না কেন, সে মাদক দ্রব্য সেবনের দোষে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দেখা। কানের ব্যভিচার হচ্ছে শ্রবণ করা। জবানের ব্যভিচার হচ্ছে কথা বলা। হাতের ব্যভিচার হচ্ছে স্পর্শ করা। পায়ের ব্যভিচার হচ্ছে ধাবিত হওয়া। অন্তর চায় আর লজ্জাস্থান সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।” অর্থাৎ ব্যভিচারের মূল হচ্ছে বেপর্দা। যারা বেপর্দা হয়ে থাকে, তারা ব্যভিচারে লিপ্ত রয়েছে। বেপর্দা ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শরীয়তী কারণ ব্যতিত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” অর্থাৎ নফসানিয়ত, লোভ-লালসা, অভিমান প্রভৃতি কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না।

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একজন চোগলখোর একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি দেশ এমনকি সারা বিশ্ব ধ্বংস করতে যথেষ্ট। কারণ, সে ফিৎনা সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হত্যা করার চেয়ে ফিৎনা সৃষ্টি করা অধিক জঘন্য অপরাধ।” অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “চোগলখোর  নিন্দুকের জন্য জাহান্নাম।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, কাজেই তোমরা পরস্পর আপোস করে নাও।” আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।” তাই মুসলমানগণ পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। গোস্বা বা রাগ করে তিনদিনের অধিক সময় যাবৎ কথা বন্ধ রাখা যাবে না।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পিতা-মাতা উনাদের প্রতি ইহসান করো। উনাদেরকে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অবস্থায় যদি পাও, উনাদেরকে তোমরা ধমক দিয়ে কথা  বলো না। উনাদের সাথে নরম সূরে কথা বলো। উনাদের জন্য দয়ার হাত বিছিয়ে দিও। উনাদের জন্য দোয়া করো- ‘আয় আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি আপনি দয়া করুন, যেমনটি উনারা আমাদেরকে ছোটবেলায় প্রতিপালন করেছেন।’ অর্থাৎ পিতা-মাতা উনাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে হবে। উনাদের জন্য দোয়া করতে হবে। উনাদের খিদমতের আঞ্জাম দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি নির্ভরশীল রয়েছে।

মূলত, বর্তমান সমাজে উপরোক্ত সাত শ্রেণীর লোকের কোনো অভাব নেই। অধিকাংশ লোকই কোনো না কোনোভাবে উপরোক্ত দোষে দোষী। কাজেই শরীয়ত বিরোধী সর্বপ্রকার কার্যকলাপ হতে প্রত্যেককেই দূরে থাকতে হবে। খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় পবিত্র শবে বরাত নছীব হবে না। সকলকেই খালিছভাবে তওবা করতে হবে। বর্ণিত দোষসমূহ হতে পরহেয থেকে খালিছভাবে ইসলাম উনার উপর দায়িম-কায়িম থাকতে হবে। তাহলেই সফলতা, কামিয়াবী।

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহর সকলের তওবা কবুল করুন। সকলকে পবিত্র শবে বরাত নছীব করুন। (আমীন)