আসুন জেনে নেই কখন দোয়া বা মুনাজাত করলে তা কবুল হবে

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ادعونى استحب لكم
অর্থ: “তোমরা আমার নিকট দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
اجيب دعوة الداع اذا دعان
অর্থ: “তারা (বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান) যখন আমাকে ডাকে আমি তাদের ডাকে সাড়া দেই।”

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ليس شيئ اكرم على الله من الدعاء
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া অপেক্ষা কোনো ইবাদতই অধিক মর্যাদাশীল ও সম্মানিত নয়।” (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং দোয়াই সকল ইবাদত-বন্দেগীর মূল। তাই প্রতিটি ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য যেমন কিছু তর্জ-তরীক্বা ও নিয়ম-নীতি রয়েছে, ঠিক তদ্রƒপ দোয়া করার জন্যও কিছু নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা রয়েছে। সেগুলো জেনে সেই অনুযায়ী দোয়া বা মুনাজাত করলে অবশ্যই সেই দোয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল এবং মঞ্জুর হবে। ইনশাআল্লাহ।

নিম্নে কতিপয় নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
(১) হালাল খাদ্য গ্রহণ করা দোয়া কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত।
(২) মিথ্যা ও যাবতীয় পাপ কাজ পরিহার করা।
(৩) দুরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে মুনাজাত শুরু করা এবং মাঝখানে ও শেষেও বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করা।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন-
ان الدعاء موقوف بين السماء و الارض حتي تصلي نبيك فصلوا في اول الدعاء و اوسطها و اخرها.

অর্থ: “দোয়া বা মুনাজাত আসমান ও যমীন উভয়ের মধ্যখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে (সেই দোয়া মহান আল্লাহ পাক উনার পর্যন্ত পৌঁছে না) যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়। সুতরাং তোমরা দোয়া বা মুনাজাতের শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে দুরূদ শরীফ পাঠ করো।”

(৪) সুন্নতী তরতীব অনুযায়ী দোয়া বা মুনাজাত করা।
(৫) মুনাজাত করার সময় উভয় হাত সিনা বা বুক পর্যন্ত উত্তোলন করা।
(৬) উভয় হাত মিলিত অবস্থায় রাখা, যাতে কোনো ফাঁক না থাকে।
(৭) হাতের তালু আসমান বরাবর রাখা। কেননা নামায উনার ক্বিবলা যেমন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দিকে, তদ্রƒপ মুনাজাত উনার ক্বিবলা হচ্ছে আসমান। তাই দুই হাতের তালু আসমান মুখী করে রাখতে হবে।
(৮) দোয়া বা মুনাজাত করার সময় অমনোযোগী না থাকা এবং অলসতা ও গাফলতী না করা।
(৯) হাক্বীক্বী হুসনে যন বা সুধারণা এবং দৃঢ় ইয়াক্বীন বা বিশ্বাসের সাথে দোয়া বা মুনাজাত করা যে- মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই আমার দোয়া কবুল করবেন। কেননা ان عند الظن
عبدى بي “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ধারণা অনুযায়ী।”
(১০) যিনি মুনাজাত করবেন উনার সাথে যারা মুনাজাতে শরীক হবেন, তারা দোয়া করার সময় ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন।
(১১) নেককার, পরহেযগার, হক্কানী আলিম, আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী ব্যক্তিত্ব উনাদের সাথে শরীক হয়ে দোয়া বা মুনাজাত করা।
(১২) পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর, জুমুয়া, ঈদ, তারাবীহ ইত্যাদি নামাযের পর এবং দ্বীনী মাহফিল বা দ্বীনি মজলিস উনার পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করলে সেটাও কবুল হয় বলে উল্লেখ রয়েছে।

আবার মধ্য রাতের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত দোয়া কবুল হওয়ার সময় এবং বৎসরের বরকতময় পাঁচ রাত্রি যথা

১. পবিত্র ১লা রজব
২. পবিত্র শবে বরাত
৩. পবিত্র শবে ক্বদর
৪. পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার রাত এবং
৫. পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার রাতেও খাছভাবে দোয়া কবুল হওয়ার রাত্রি।

আর সর্বোচ্চ খাছভাবে এবং সমস্ত দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ দিন ও রাত্রি হলেন মহাপবিত্র ১২ই রবিউল আউওয়াল শরীফ। (১৩) নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করে মুনাজাত শেষ করা সুন্নত।”

سبحان ربك رب العزة عما يصفون و سلام علي المرسلين والحمد لله رب العلمين.