রাস্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার যৌক্তিকতা।

-রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে অনেকের অনেক পোস্ট দেখছি। পজিটিভ, নেগেটিভ দুই ধরনের পোস্ট আছে। রাস্ট্রধর্ম ইসলাম দাবীদার পক্ষের সবচেয়ে বড় দাবী হোলও
"রাস্ট্র কথা বলে না, তাই রাষ্ট্রের যেহেতু ভাষা আছে, তাহলে রাষ্ট্রের ধর্ম থাকবে না কেন" ?
এই পোস্টের এন্টি পোস্ট হিসেবে মুত্রমনারা, আমার দাদারা এবং তথাকথিত "সুশীল" সমাজ একটা যুক্তিই দাঁড় করাচ্ছে তা হোলও - "রাষ্ট্রের ভাষা থাকবে কারণ রাস্ট্র কথা বলে, রাষ্ট্রের অফিস, আদালত আছে। রাস্ট্রকে মামলা মোকদ্দমা চালাতে হয় ইত্যাদি"
আর দাদাপক্ষের দাবী হোলও - " রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে সংখ্যাগরিস্ট পক্ষ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করার অযুহাত পায়"
এই দুটি বিষয় খন্ডানোর জন্যই আমার এই পোস্টের অবতারনা !
আজ থাকবে প্রথম খন্ড
---------------------------
রাষ্ট্রের ভাষাঃ আসলে কোন ভাষায় কথা বলে ??
বাংলাদেশের রাস্ট্রধর্ম বাংলা, এই বিষয়ে নতুন করে কিছু জানানোর নেই বা লিখার ও নেই। কিন্তু রাস্ট্র কি কথা বলে ? অসম্ভব রাষ্ট্রেকে পরিচালনা করার জন্য বা অধিবাসীরা কথা বলে তা রাষ্ট্রের কথা কখনই হয় না।
প্রথমত, আসুন আমরা দেখি বাংলা ভাষা কেন আমাদের রাস্ট্রভাষা। এর কারণ আমরা বাঙালী (ঘটিরা যেন নাক না গলায়)। তাই আমাদের রাস্ট্রভাষা বাংলা। এখন এই দেশে বাঙালী ছাড়াও বিহারী, উপজাতি লোক বাস করে এরা কিন্তু বাঙালী না। তাহলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করাতে কি এরা মাইন্ড করে নি ?
অবশ্যই করেছে, বিহারীরা সম্প্রতি আমাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যাই হোক, যেহেতু বাংলা ছাড়াও আরো ভাষাভাষী এদের উপর কি আমরা বাংলা চাপিয়ে দিইনি ? কি বলবেন শুশীল সমাজ ?
উত্তর নিশ্চয়ই বাংলাদেশে থাকবে আর বাংলায় কথা বলবে না তা কি করে হয়? ঠিক এই জিনিসটাই চাইছিলাম, এই পয়েন্ট মনে রাখুন সবাই।
এখন প্রশ্ন আসে রাষ্ট্রের অফিস আদালতে বাংলার প্রয়োজন, তাই রাস্ট্র কথা বলে। যিনি যা যেনারা এই কথা লিখেছেন, তাঁরা কি বলতে পারবেন বাংলাদেশের কয়টা অফিস তেনারা ঘুরেছেন ? প্রতিটি দেশের অফিস আদালতকে মুলত প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। সরকারী
২। বেসরকারী
সরকারী অফিস/আদালতের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ অফিস কোনটি যদি বলা হয় তাহলে সবাই বলবেন উচ্চ আদালতের কথা, অর্থাৎ সুপ্রীম কোর্টের কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার হোলও মুর্খ গুলো এটাও জানে না যে এই আদালতের ভাষা কিন্তু ইংরেজী।
বাংলাদেশ সংবিধানের সবচেয়ে ছোট অনুচ্ছেদ কোনটি কেউ জানেন ? তা হচ্ছে অনুচ্ছেদ ৩। এই অনুচ্ছেদে আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। অনুচ্ছদটি আরও একটু ব্যাপক হওয়া উচিৎ ছিল ।
বেশ কিছু দিন আগে সুপ্রিমকোর্ট বাংলা ভাষার বিকৃতি নিয়ে একটি রুল জারি করে। সেখানে আদালত বলেন ‘পৃথিবীতে বাংলাই একমাত্র ভাষা যার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম দৃষ্টান্ত আর দ্বিতীয়টি নেই। সুতরাং এ ভাষার পবিত্রতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ অথচ এ সুপ্রিমকোর্টেই বাংলার ব্যাবহার নেই !
অথচ মানবাধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের নিজ ভাষাতেই বিচার হবার নিয়ম। ধরুন একজন ইংরেজী না জানা লোকের উচ্চ আদালতে বেকসুর খালাসের রায় হোলও অথচ সে বুঝলই না, তাকে কি করতে হবে ? তাকে তার আইনজীবী থেকে বুঝতে হবে। একজন বাংলাদেশীর জন্য ইংরেজী জানাটা বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু তার বিচারের রায় সে নিজে বুঝতে পারাটা বাধ্যতামুলক।
১৯৬৬ সনের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪(৩) দফায় বিচারপ্রার্থী যে ভাষায় বোঝে সেই ভাষায় বিচার পাওয়া তার মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশও এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে অনেক আগেই, কিন্তু অদ্ভুত কারণে নিজ দেশের উচ্চ আদালতে তা বাস্তবায়ন এখনও করা হয়নি ।
শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই মনে হয় আমাদের তো বাংলা নামে একটা ভাষা আছে ! আর সারা বছর হিন্দী আর ইংরেজী নিয়ে পড়ে থাকি।
আপনারা জানেন মোঘল আমলে এদেশে আদালতের সরকারি ভাষা ছিল ফার্সি। ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৫ সালে ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলন করে। এর বেশ কিছু বছর পর নিম্ন আদালতে বাংলা ও উচ্চ আদালতে ইংরেজির ব্যবহার শুরু হয়।
যারা আইনজীবি তাদের কাছ থেকেই শুনেছিলাম ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আদালতে বাংলার চেয়ে ইংরেজির ব্যবহার বেড়ে যেতে থাকে। স্বাধীনতার পরও নিম্ন আদালতে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাই চালু ছিল বলে জানা যায়।
১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭(২) ধারা এবং ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫৮ ধারা সরকারকে আদালতের ভাষা নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছে। ১৯৮৭ সালের আইনের ৩(১) ধারার সুস্পষ্ট নির্দেশনা সরকারকে এ দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে।১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকার বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করা হয়।
‘১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইনে’ বলা হয়েছে, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতে সওয়াল জবাব এবং আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। উল্লিখিত কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহলে তা বেআইনি বা অকার্যকর বলে গণ্য হবে।’
কিন্তু এরপরেও কিন্তু এখানে রাস্ট্রের ভাষা বাংলা হয়নি !!!!
- - - - - - - - - - - -
এরপর আসুন পড়ালেখার বিষয়। এইচএসসির পর সম্মান শ্রেনীতে, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং কোন বিষয়ে বাংলা অনুবাদের বই আছে ? ঐসব শ্রেনীতে কি বাংলায় লিখা পড়া হয় ? বাংলায় পরীক্ষা হয় ? বাংলাদেশের একটা ছেলে ইংরেজী গ্রামারে যত অভিজ্ঞ বাংলা ব্যাকরণে ঠিক ততটাই অনভিজ্ঞ ! কেন ? আর ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেদের কথা নাইবা বললাম ! এদের মাঝে অনেকেই ঠিকভাবে বাংলায় কথাও বলত পারে না !
এরপর আসুন রেডিও, মিডিয়ায় চামড়া ব্যাবসায়ীরা , এরা যে বিকৃত বাংলায় কথা বলে এতে বাংলা ভাষা অদুর ভবিষ্যতে কোথাও যাবে তা মাঝে মাঝে চিন্তা করতে হয়।
এরপর ধরি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল প্রান আরএমজি সেক্টর। গত অর্থবছরেও মোট জিডিপির ৮২% এসেছে এই খাত থেকে, আর এই খাতের মূল যে বিষয় তা পুরোটাই গড়ে উঠেছে ইংরেজী ভাষাকে কেন্দ্র করে। এর একটা কারণ হোলও বৈদেশিক বানিজ্যের মূল ভাষা হচ্ছে ইংরেজী। তাহলে এখানেও সংখ্যাগরিস্টতা কেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, তাই না?
এই মুর্খ গুলো কি জানে এই সেক্টর একদিন বন্ধ থাকলে বাংলাদেশের কি হবে ?
তাহলে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের ভাষা নেই কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংঘটনের ভাষা আছে। এবং এরা বাংলায় কথা বলে এটা আংশিক সত্য, পুরোপুরি না। সুতরাং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের রিট হয়েছে ইংরেজীতে, বিচার হবে ইংরেজীতে, রায় হবে ইংরেজীতে সেখানে এই ধরনের হাস্যকর কথা বলার কি যুক্তি ?
তাই এদের বলি রাষ্ট্রের ভাষা আছে যারা বলছে এরা যেন আগে রাষ্ট্রের তথাকথিত কথাকে পুরোপুরি বাংলা করে, নাহলে অচিরেই এদের এসব লোক দেখানো আন্দোলন মানুষ আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবে, এমনিতেই টাকার ভাগাভাগি নিয়ে এদের মাঝে বিরোধ চরম আকারে ধারন করেছিল, তা দেশ বাসী সবাই জানে।
আর যারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে পারে তারা অদুর ভবিষ্যতে আর কি কি করতে পারবে তা সময়ই বলে দিবে।
সুতরাং দেশের ভাষা আগে বাংলাকে সু প্রতিষ্ঠিত করাই কি কাম্য নয় ???
সুতরাং যে সংখ্যাগরিস্টতার দোহাই দেখিয়ে রাস্ট্রের ভাষা বাংলা করা হয়েছে, সেই একই কারণে রাষ্ট্রের ধর্ম "ইসলাম" বহাল থাকবে এটাই সবার কাম্য ।
সবচেয়ে মজার কথা হোলও, রাস্ট্রধর্ম বাদ দেয়ার জন্য যে সংঘটন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে সেই সুলতানা কামাল চক্রবর্তী, জাফর শ্যার উনাদের সিএইচটি কমিশনের ওয়েব সাইট ও কিন্তু ইংরেজীতে, বিশ্বাস না হলে সার্চ দিয়েই দেখুন !
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় রাষ্ট্রের ভাষা নেই, রাষ্ট্রের জনগণের ভাষা আছে। তারাই অফিস আদালত পরিচালনা করেন, ভাষার প্রয়োজন মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রের জন্য না। রাস্ট্র ছাড়াও মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু মানুষ ছাড়া রাস্ট্র কল্পনা করা যায় না।
আর যদি তর্কের খাতিরেও ধরি তাহলে রাষ্ট্রের ভাষা এখন দুই ভাগে বিভক্ত !! সুতরাং আগে রাষ্ট্রের কথা বলা বাংলায় নিশ্চিত করুন !
----------------------------------------
রাষ্ট্রের ধর্মঃ কেন থাকা উচিৎ ?
এবার বলতে হয় রাষ্ট্রের মূল উপাদান হোলও জনগণ । আর জনগণের দ্বারাই, জনগনের জন্যই সরকার পরিচালিত হয়। মানুশের জীবনের মূল এবং প্রধান অংশ জুড়ে আছে ধর্ম। ধর্ম মানুষকে কি শিক্ষা দেয় না ? নৈতিকতা, সততা, বিনয়, নম্রতা, সম্মান, শ্রদ্ধা, সদাচার, সদালাপ কি না শিক্ষা দেয় ? এখন কেউ যদি তা অনুধাবন না করে অনুসরন না করে সেটা তার ব্যার্থতা, এখানে ধর্মের কেন দোষ হবে ?
রাষ্ট্রের লোকের যেহেতু ভাষা আছে এবং তা রাষ্ট্রের কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেহেতু রাষ্ট্রের লোকদের ধর্ম ও আছে এবং তা ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
বাংলাদেশে যেহেতু সংখ্যা গরিস্ট ৯৫ ভাগ মুসলিম সেহেতু এখানে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম বাঞ্ছনীয় ।
বরং ইসলাম কেন থাকবে না, ইসলাম তো রাষ্ট্রের অন্য ধর্মালম্বীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি, কাউকে নামাজ পড়তে বাধ্য করেনি, কিন্তু ভাষা করেছে । অন্য ভাষাভাষীদের উপর বাংলাকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যা উপরে বলেছিলাম এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ গনতন্ত্রে একটা নীতি হোলও - majority is granted অর্থাৎ সঙ্খ্যাগরিস্টতাই গৃহীত হবে।
এবার বাকী থাকে "সংখ্যালঘু নির্যাতন", এই বিষয়ের জন্য আপনাদের পরবর্তী পর্বের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এই বিষয়ের অবতারনা করলে পোস্টের কলেবর অনেক বেড়ে যাবে।
[ হাই কোর্ট আগামীকাল এ এই মামলার রায় দেয়া হবে]
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে !