জরায়ুর মুখের ক্যান্সার বিষয়ে প্রথম আলোর বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং কথিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের জঘন্য মিথ্যাচার ।

জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা বাড়াতে গতকাল ৩১/০১/২০১৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) থেকে একটি র‍্যালী বের করে। যার খবর বিভিন্ন পত্রিকায় আসে। যার মধ্যে নাস্তিক্যবাদের পৃষ্ঠপোষক ও কাট্রা ইসলামবিদ্বেষি প্রথম আলো সুক্ষ শয়তানী করে।তারা হেডলাইন দেয় "জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ" নাউযুবিল্লাহ।
উক্ত লিখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কয়েকজন গন্ডমুর্খ,বকলম চিকিৎসক এর দোহাই দিয়ে উল্লেখ করা হয় "বিশ্বে নারীদের ক্যানসারের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। আর দেশে এ রোগের প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। অল্প বয়সে বিয়ে হলে বিবাহিত জীবন দীর্ঘ হয়, সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেড়ে যায়। এতে জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ও খাদ্যাভাসও এর জন্য দায়ী"।https://tinyurl.com/hbeqn6m
এ ধরনের বক্তব্য বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচারীতা। জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেনা যে বাল্য বিয়ে এই রোগের প্রধান কারন। অল্প বয়সে বিবাহ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ এখন যেন দায়ভার ইসলামের উপর চাপিয়ে দেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এই অসুস্থ প্রচারণার শিকার হয়ে আজ এমনকি মুসলিমরাও এর বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে অথবা নানাভাবে একে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে।নাউযুবিল্লাহ।
মেডিক্যাল সাইন্সের প্রেক্ষাপটে অল্প বয়সে বিবাহের বিরুদ্ধে এই প্রপাগান্ডার কিছু অজানা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার (ইংরেজি: Cervical cancer) নারীদের একটি রোগ । যে কোনো বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। তবে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা এ রোগের শিকার হন বেশি। আবার ৫০ বছর বয়স্ক কিংবা এর থেকে বেশি বয়সের নারীরাও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।২০ বছরের কম বয়সীদের নিচে এ রোগ সাধারণত হয় না। উপযুক্ত চিকিৎসায় শতভাগ আরোগ্য সম্ভব।
গন্ডমুর্খ চিকিৎসকেরা এবং প্রথম আলো জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের দায় বাল্য বিয়ের উপর ছাপিয়ে দিয়েছে। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন কোন কথা-ই সুনির্দিষ্টভাবে নেই। যার প্রমাণ এখন উপস্থাপন করবো ইনশা আল্লাহ।
১) ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এর তথ্য মতে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের কারন সম্পর্কে যা বলা আছে -
ক)হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি দিয়ে ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয়। HPV একটি গ্রুপ ভাইরাস। এর প্রায় ১০০ টাইপ আছে আছে। সাধারনত অবৈধ এবং বিকৃত যৌনমিলনের কারনে এই ভাইরাস ছড়ায়।কিছু কিছু HPV ভাইরাস কোন সমস্যা করেনা, আবার কিছু কিছু ভ্যাজাইনাল ওয়ার্ট তৈরী করে। বেশিরভাগ ক্যান্সারের জন্য HPV 16 , HPV 18 টাইপ দায়ী ।
খ) অতিরিক্ত কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে কিন্তু যা সারভাইকাল ক্যান্সার হওয়ার মুল কারন নয় তা হল -
* যেসকল নারী ধুমপান করে
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে যেমন এইডস হলে।
* জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি গ্রহন করলে
* ঘন ঘন সন্তান নিলে নাকি জরায়ুর ক্যান্সার হয় কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে বিষয়টা ঘোলাটে, ক্লিয়ার নয়।
https://tinyurl.com/cpufsby
২) ন্যাশনাল সারভাইকাল ক্যান্সার কোয়ালিশনের তথ্যমতে -
* হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি দিয়ে ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয়। HPV একটি গ্রুপ ভাইরাস। এর প্রায় ১০০ টাইপ আছে আছে। সাধারনত অবৈধ এবং বিকৃত যৌনমিলনের কারনে এই ভাইরাস ছড়ায়।কিছু কিছু HPV ভাইরাস কন সমস্যা করেনা, আবার কিছু কিছু ভ্যাজাইনাল ওয়ার্ট তৈরী করে। বেশিরভাগ ক্যান্সারের জন্য HPV 16 , HPV 18 দায়ী ।
https://tinyurl.com/ju3eynt
৩) ইংল্যান্ডের ক্যান্সার রিসার্চ এর তথ্যমতে-
* HPV ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষের সাথে অবৈধ এবং বিকৃত সম্পর্কের কারনে আক্রান্ত হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
* খতনাঃ যারা খতনা করে থাকে তাদের থেকে এই ভাইরাস মহিলাদের মাঝে যায়না।
* যাদের এইডস এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগা আছে তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি
* যে সকল মহিলা ধুমপান করে
 * প্রতি ১০ টা কেসের একটার কারন হল জন্মনিয়ন্ত্রন গ্রহন করা
* ঘন ঘন সন্তান, ১৭ বছর বয়সের আগে সন্তান নিলে নাকি জরায়ুর ক্যান্সার হয় কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে বিষয়টা ঘোলাটে, ক্লিয়ার নয়।
Women who have had children are at an increased risk of cervical cancer compared to those who haven't. Having your first baby before the age of 17 also gives a higher risk, compared to women who had their first baby after the age of 25. The reasons for this are unclear.
* পরিবারের অন্য কারো পুর্ব থেকে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত থাকলে হতে পারে।
* দারিদ্রতা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠা
https://tinyurl.com/ztuqflc
৪) আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটিঃ
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের বিষয়ে রিস্ক ফ্যাক্টরের কথা বলেছে। তারা বলেছে রিস্ক ফ্যাক্টর থাকা মানেই এমন নয় যে সে রোগ হবেই।রিস্ক ফ্যাক্টরসমুহ বলার পুর্বে তারা বলেছে -
Several risk factors increase your chance of developing cervical cancer. Women without any of these risk factors rarely develop cervical cancer. Although these risk factors increase the odds of developing cervical cancer, many women with these risks do not develop this disease. When a woman develops cervical cancer or pre-cancerous changes, it might not be possible to say that a particular risk factor was the cause.
অর্থাৎ অনেকগুলো রিস্ক ফ্যাক্টর জরায়ুর মুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বাড়ায়।খুব কম মহিলাই এসকল রিস্ক ফ্যাক্টর ছাড়াও এ রোগ আক্রান্ত হয়। যদিও এসকল রিস্ক ফ্যাক্টর জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়, অনেক মহিলার এসকল রিস্ক ফ্যাক্টর থাকার পরেও তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়না। যখন কোন মহিলা জরায়ুর ক্যান্সার কিংবা ক্যান্সার হবার পুর্ববর্তি লক্ষন দেখা দেয় ইহা বলা সম্ভব নয় যে কোন নির্দিষ্ট রিস্ক ফ্যাক্টর এ রোগের জন্য দায়ী"
তারা যেসকল রিস্ক ফ্যাক্টর উল্লেখ করেছে যা জরায়ুর ক্যান্সার হওয়ার মুল কারন নয় তা হল-
১) হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি দিয়ে ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয়। HPV একটি গ্রুপ ভাইরাস। এর প্রায় ১০০ টাইপ আছে আছে। সাধারনত অবৈধ এবং বিকৃত যৌনমিলনের কারনে এই ভাইরাস ছড়ায়।
২) যে সকল মহিলা ধুমপান করে
 ৩) দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন AIDS আক্রান্ত মহিলা
৪) যারা অটোইমুইনি রোগের জন্য ইমুনিসাপ্রেসেন্ট ড্রাগ ব্যবহার করছে
৫) Chlamydia infection - এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা বিকৃত যৌনাচারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত মহিলার জরায়ুর মুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি
৬) ফলফলাদি এবং শাকসব্জি কম খেলে রোগ প্রতিরোধ ঠিকমত হয়না যার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
৭) অতিরিক্ত ওজন হলে
৮) জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি ব্যবহার করলে
 ৯) বহুগামীতা
১০) একাধিক সন্তান - যেসকল মহিলার ৩ এর অধিক বাচ্ছা রয়েছে তাদের নাকি এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু তারাই বলছে কেউ জানেনা ইহা কি কারনে সত্য। তারা বলছে "Women who have had 3 or more full-term pregnancies have an increased risk of developing cervical cancer. No one really knows why this is true".
তারা এ বিষয়ে যে সকল থিউরী তারা দিয়েছে তার ও কোন ভিত্তি নাই।
১১) ঘন ঘন সন্তান, ১৭ বছর বয়সের আগে সন্তান নিলে নাকি জরায়ুর ক্যান্সার হয় কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে বিষয়টা ঘোলাটে, ক্লিয়ার নয়।
Women who were younger than 17 years when they had their first full-term pregnancy are almost 2 times more likely to get cervical cancer later in life than women who waited to get pregnant until they were 25 years or older.
১২) দারিদ্রতা
১৩) পরিবারের অন্য কারো পুর্ব থেকে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত থাকলে হতে পারে।
https://tinyurl.com/zhmoykh
তাহলে দেখা যাচ্ছে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের জন্য মুল দায়ী হল একটি ভাইরাস যার নাম HPV. যা অবৈধ এবং বিকৃত আচরণের কারণে ছড়ায় বেশি। কোনক্রমেই অল্প বয়সে বিয়ে এর মুল কারন নয়। এখানে রিস্ক ফ্যাক্টরের কোনটিতেই বলা হয়নি যে অল্প বয়সে বিয়ে হলে এই রোগ হয়।
অথচ প্রথম আলো এবং মুর্খ ডাক্তারেরা বাল্য বিয়েকে মুল কারন হিসেবে বলেছে। তারা বলেনি যে HPV নামক ভাইরাস মুল কারন। তারা বলেনি এই রোগ ছড়ায় বিকৃত আচরণের মাধ্যমে, অল্প বয়সে বিয়ের কারণে নয়। বরং অল্প বয়সে বিয়ে করলে পুরুষের একাধিক নারী সাথে সম্পর্ক কিংবা নারীর একাধিক পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক হবেনা এবং এ রোগ থেকে রক্ষা পাবে। পাশ্চাত্য সমাজে অবৈধ, অনৈতিক, বিকৃত আচরণের কারণে তাদের দেশ এই রোগের প্রকোপ বেশি কিন্তু মুসলিম দেশে নয়।
আজকে যারা বাল্য বিবাহকে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের মুল কারন বলে তারা মুসলিম সমাজে অশ্লীলতা ,বেহায়াপনা,নোংরামী , অনৈতিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য গভীর ষড়যন্ত্র করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অল্প বয়সে বিবাহ কিছুতেই জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের কারন নয় ,বরং এ ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে অল্প বয়সে বিয়েই এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম।