পহেলা বৈশাখ রাজনীতি না সংস্কৃতি?

বর্তমান বাংলা সন চালু করেছেন বাদশাহ আকবর। সে এ কাজটি করেছে বাংলার রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে। প্রখ্যাত জ্যোতিষ বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহ শিরাজী বাদশাহর নির্দেশে হিজরী সনের সাথে মিল রেখে বাংলা সন। তখন দিল্লী সরকারের অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা ছিল হিজরী সন। আর বাংলায় চালু ছিল বঙাব্দ, যা চালু করেছিলেন রাজা শশাংক। রাজা শশাংকের বঙাব্দ আর চলমান বাংলা সন এক নয়। যদিও আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী চলমান সনকে বঙাব্দ বলে চালাতে চান।  যখন ফসলী সন চাল হয় তখনও মাসের নাম বর্তমানের মতোই বৈশাখই ছিল। যদিও বৈশাখ হিন্দু দেবীর নাম। জনসাধারন বা কৃষক সমাজের সুবিধার্থেই শিরাজী সাহেব মানের নাম আগের মতেই রেখে দিয়েছে। এটা ছিল স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি দিল্লীর সম্মান প্রদর্শন। সেই থেকেই বৈশাখ মাসে জমিদার, নবাব ও তালুকদারেরা খাজনা বা রাজস্ব আদায় করতো। এখনও তহশীল অফিস গুলো বৈশাখ চৈত্র হিসাবে খাজনা আদায় করে। এই সময়ে এখনও গ্রাম বাংলায় ব্যবসায়ীরা হালখাতা পালন করে। 
হাল শব্দটি ফার্সী, খাতা শব্দটি আরবী ও ফার্সী। দুটো শব্দ মিলিয়ে হালখাতা হয়েছে। হাল মানে বর্তমান বা কারেন্ট। নাগাদ শব্দটিও ফার্সী। দুটো শব্দ মিলিয়ে হয়েছে হালনাগাদ। পহেলা বৈশাখে জমিদার বাড়িতে পূণ্যা বা রাজস্ব আদায়ের উত্‍সব পালিত হতো। সেদিন প্রজারা দলে দলে এসে তাদের পুরাণো খাজনা পরিশোধ করতো। পূণ্যা শব্দটি এসেছে পূণ্য শব্দ থেকে। এর মানে হলো ওইদিন খাজনা পরিশোধ করলে পূণ্য লাভ হবে। এই শব্দ চালু হওয়ার কারণ ইংরেজ আমলে বেশীর ভাগ জমিদার ছিল হিন্দু। তারাই এই শব্দটি চালু করেছে।তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে,  পহেলা বৈশাখ রাজস্ব সংক্রান্ত একটি একটি দিন। 

রাজধানী ঢাকা সহ কয়েকটি শহরে পহেলা বৈশাখ একটি সাংস্কৃতিক অনুস্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই অনুস্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্র ও কিছু শিক্ষক। এরা পহেলা বৈশাখের উত্‍সবে মংগল প্রদীপ যাত্রা চালু করেছে। মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা পশু পাখির মুখোশ পরে মিছিল করে। মুখ সহ শরীরের বিভিন্ন অংগে উল্কি আঁকে। এই আনন্দ উত্‍সবে অংশ গ্রহণের জন্যে রাজধানীতে মানুষের ঢল নামে। সাধারন মানুষের সাথে মংগল প্রদীপ মিছিলের কোন সম্পর্ক নেই। তারা জানেনও না কেন এই পশু পাখির মিছিল। কি উদ্যেশ্য এই মিছিলের। এটা নাকি সার্বজনীন উত্‍সব। কিন্তু এই মিছিলের পেছনে কোন অদৃশ্য শক্তি আছে তা আজও পরিস্কার হয়নি। কারা এই মিছিলের জন্যে অর্থ জোগান দেন তাও স্পস্ট নয়। এমন কি পশ্চিম বাংলার দাদারাও পহেলা বেশাখ নিয়ে এমন মাতামাতি করে না। পশু পাখির মিছিল নের করে না। তাহলে বাংলাদেশে এসব হচ্ছে কেন? কারা এসব করাচ্ছে। কিইবা তাদের উদ্দেশ্য? পশ্চিম বাংলার জ্ঞানীজনতো পহেলা বৈশাখ নিয়ে এমন মারামাতি করছেনা। সত্যি কথা বলতে, কোলকাতা এখন আর বাংগালী দাদাদের দখলে নেই। বৃটিশ সাহেবদের রাজধানী কোলকাতা এখন ভিন্ন ভাষীদের দখলে। পশ্চিম বাংলার রাস্ট্র ও সরকারী ভাষা এখন হিন্দী। স্কুল কলেজে হিন্দী পড়া এখন বাধ্যতামূলক।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে রাজনীতি ও মাতামাতি করা এখন একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে।  পশু পাখির মুখোশ লাগিয়ে, বা গাঁজা ভাং খেয়ে অশ্লীল নৃত্য দেশের কোন মানুষই সমর্থন করেনা। এসব অশ্লীল বেলেল্লপনা শুরু হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরে। হঠাত্‍ করে কে বা কারা তরুণদের উসকিয়ে এসব করাচ্ছে তার মূলে যাওয়া দরকার। কেনইবা অদৃশ্য শক্তি আমাদের তরুণদের দিয়ে এসব করাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য কি সেটা আজ খুবই জরূরী। ভারতীয়দের ধর্মে নানা ধরণের পশু পাখির প্রভাব রয়েছে। তাদের দেবতারা ওইসব পশু পাখি ভর করে ভ্রমণ করে। এমন কি ইঁদরও তাদের দেবতার সম্মান পান।

যা খোলা চেখে আমাদের  তরুণ তরুণীরা দেখতে পায়না। তারা ভাবছে এটা বাংগালীপনা বা বাংগালিয়ানা।  তারা মনে করছে বা তাদের বলে দেয়া হচ্ছে মংগল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। তারা ভুলে যায়, ভাষা এক হলেও দুই বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এক নয়। বাংলাদেশীরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আলাদা ঐতিহ্যের কারণেই বাংলাদেশ নামের ভৌগলিক এলাকাটা আজ স্বাধীন। ভৌগলিক লোকজ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য এক হয়েই আমরা একটি আলাদা জাতিতে পরিণত হয়েছি। আর ওই একই কারণেই পশ্চিম বাংলার বাংগালীরা  দিল্লীর অধীনে তেকেই নিজেদের স্বাধিন মনে করছে। তারা চান বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মিশে যাক। সোজা কথায় বলা যেতে পারে এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবে পদানত ও পরাজিত করতে চায়। আমরা যারা বাংলাদেশের আলাদা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা বলি আমাদের সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন  বলে গালি গালাজ দেয়া হয়। বাংলাদেশী শব্দটা নাকি পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন  সাম্প্রদায়িক গোস্ঠি চালু করেছে। আপনি যখনই ইসলাম বা মুসলমানের কথা বলবেন তখনি আপনাকে গালমন্দ করা হবে। এই গোস্ঠি নিজেদের অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মনে করে। কিন্তু এদের চিন্তাধারা বিকাশ ঘটেছে বেদ উপনিষদ থেকে। এরা মনে করে সনাতনী হিন্দু ঐতিহ্যই বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি। বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশের কোথাও কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। কিন্তু একই সময়ে ভারতে কয়েক হাজার দাংগা হয়েছে। এইতো ক’দিন আগে কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃস্টি হয়েছিল। ভারত নিজেকে স্যেকুলার অসাম্প্রদায়িক দেশ বলে বড় গলায় জাহির করে , বাস্তবে ভারত কখনই অসাম্প্রদায়িক ছিলনা। অসাম্প্রদায়িকতা ভারতের এক খোলস ও চাণক্য নীতি।