পহেলা বৈশাখ কি?

পহেলা বৈশাখ সব্দগত ভাবে পহেলা + বৈশাখ দুটি আলাদা শব্দ থেকে নেয়া।
পহেলা উৎপত্তিগত ভাবে উর্দু শব্দ পেহেলী থেকে পহেলা , আর্থ হচ্ছে প্রথম (ভারতে পয়লা শব্দটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু বাংলাদেশে বাংলা পয়লা বৈশাখ কথাটি পহেলা হিসাবে চালু রয়েছে তবে এখনো পয়লা ও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়) আর বৈশাখ শব্দ যাকিনা এসেছে বিশাখা নক্ষত্রে সূর্যের একটি অবস্থান কে বুঝান হয়েছে।
পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। এদেশে বর্তমানে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে মোট ৩টি সন গণনা পদ্ধতি চালু আছে। হিজরী বা আরবী সন, বাংলা বা ফসলী সন ও ইংরেজি বা গ্রেগোরিয়ান সনটি।
সম্রাট আকবরের আমলে ফারসী মাসের অনুকরণে বাংলা মাসের নাম ছিল যথাক্রমে ফারওয়ারদিন, উর্দিবাহিশ, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহারিবার, মেহের, আবান, আজার, দে, বাহমান ও ইসফান্দ। পরবর্তীতে নানা ঘটনাক্রমে মাসের নামগুলো বিভিন্ন তারকার নামানুসারে বর্তমান নামে রূপান্তরিত বা প্রবর্তন করা হয়।বাংলা বা ফসলী সনে বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহিত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ “সূর্যসিদ্ধান্ত” থেকে।বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে –
বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আষাঢ় – উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ভাদ্র – পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ফাল্গুন – উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল ফারসী ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজী বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে। আর হিজরী সনে তারিখ শুরু হয় সূর্য ডোবার সাথে সাথে।
একটি কথা বলে রাখা ভাল আজকের বাংলা সন যে প্রচলন করেন সে হচ্ছে জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। সে মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট।মুঘল সাম্রাজ্য ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত ছিল; অঞ্চলটি সে সময় হিন্দুস্থান বা হিন্দ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া আফগানিস্থান ও বেলুচিস্থানের বেশ কিছু এলাকাও মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৭০৭ সাল পর্যন্ত এর সীমানা বিস্তার করে, এবং ১৮৫৭ সালের এর পতন ঘটে। চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লঙের উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে দিল্লীর লোদী বংশীয় সর্বশেষ সুলতান ইবরাহিম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো । পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। সভাবতই অল্পবয়সে শাসনভার গ্রহণ করায় পুঁথিগত বিদ্যার অবসান ঘটে। তার সভাসদ্‌ ছিল ত্বত কালে মুঘল সালতানাতের মসুর ব্যক্তিগন যার পরবর্তীতে দীন-ই-এলাহী (নিজ ধর্ম) প্রচলনে প্ররোচনাদেয় তার সাম্রাজ্য রক্ষায় সে সাম্রাজ্যের রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে বিভিন্ন রাজবংশের রাজকন্যাদের বিয়ে করে।