পহেলা বৈশাখ তথা যেকোন নববর্ষ পালন করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকেই হারাম

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ হতে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক আনেন, তখন এসে দেখতে পেলেন, মদীনা শরীফ উনার যাঁরা অধিবাসী ছিলেন উনারা দু’দিন খেলাধুলা করতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ দু’দিন কি? আপনারা যে খেল-তামাশা করে থাকেন? যাঁরা মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী ছিলেন উনারা জবাব দিলেন, এ দু’দিন আমরা আইয়ামে জাহিলিয়াত হতে খেলাধুলা করে আসছি। এটা নতুন নয় ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অনেক পূর্ব হতেই এ দু’দিন খেল-তামাশা হয়ে আসছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে এ দু’দিন বাদ দিয়ে অর্থাৎ এ খেল-তামাশার দু’দিন পাল্টিয়ে আপনাদের উত্তম দুটি দিন দান করবেন। একটি হচ্ছে, কুরবানী উনার দিন আরেকটি হচ্ছে ফিতর উনার দিন।”
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যে দু’দিন মদীনা শরীফ উনার যাঁরা অধিবাসী উনারা খেল-তামাশা করতেন সে দু’টির একটি দিন ছিল বছরের প্রথম দিন বা নববর্ষ।
আর ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী ঈসায়ীপূর্ব ৪৬ সালে রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। আর তারও পূর্বে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ ঈসায়ীপূর্ব ৮০০ সালে এই নববর্ষের প্রবর্তন করেছিলো এবং এ ধারাবাহিকতায় এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ইরান থেকেই ইহা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
এত পূর্ব হতে নববর্ষ উৎসব চালু থাকার পরও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেটা পালন করা পছণ্দ করলেন না। সুতরাং, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে নববর্ষ বা নওরোজ পালন করা নিষিদ্ধ সাব্যস্ত হয়। তাহলে একজন মুসলমান কি করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপন্দনীয় বিষয় তথা পহেলা বৈশাখ পালনকে পছন্দ করতে পারে?
এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্যে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়েও কোন উৎসব পালনকে পছন্দ করেননি। তাই তিনি উক্ত দিন দু’টিকে পাল্টিয়ে দু’টি উত্তম দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ উক্ত দু’দিন তথা দু’দিনের আমল ছিল নিকৃষ্ট যেমন বর্তমানে পহেলা বৈশাখসহ সকল নববর্ষের আমল নিকৃষ্ট।
নববর্ষের আমল নিকৃষ্ট বলেই রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে উম্মতের জন্যে দু’টি উত্তম দিন- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা উপহার দিয়েছেন। তাহলে উম্মত কি করে পহেলা বৈশাখের মতো নিকৃষ্ট দিবস পালন করতে পারে?
এছাড়া, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক উনার সময়কালে পৃথিবীব্যাপি দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছে যেতে থাকে। এমন এক অবস্থায় মিশর যখন খিলাফত মুবারক উনার করায়াত্তে আসে। তখন সেখানে একবার নীল নদের পানি শুকিয়ে গেলে সেখানকার লোকজন তাদের ঐতিহ্যগত প্রথা হিসেবে মিশরের গভর্নর হযরত আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনাকে নীল নদে কুমারী বলি দেয়ার প্রস্তাব দেয়।
তখন হযরত আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি কুমারী বলি দানের কুফরী প্রথাকে রহিত করে নীল নদের প্রতি ফরমান মুবারক পাঠান যে, “নীল নদী যদি তার ক্ষমতা বলে প্রবাহিত হয় তাহলে আমাদের তার পানির প্রয়োজন নেই আর নীল নদ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষমতায় প্রবাহিত হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন নীল নদে পানি প্রবাহিত করে দেন”।
পাতলা চামড়ার কাগজে লিখিত উক্ত ফরমান মুবারক পাওয়া মাত্র নীল নদে এক লাফে ১৪ হাত পানি এসে যায়।
উক্ত ওয়াকিয়া হতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তাহলো- খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আঞ্চলিক প্রথাকে সমূলে উচ্ছেদ করে দিয়ে দ্বীন ইসলাম জারি করে দিলেন অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে আঞ্চলিক প্রথা বা উৎসবের কোন স্থান নেই বরং দ্বীন ইসলাম সমস্ত কুফরী-শিরকী বিবর্জিত জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং আদ্যপ্রান্ত কুফরী-শিরকীতে ভরপুর পহেলা বৈশাখ নামক আঞ্চলিক প্রথা কি করে এদেশের মুসলমান উনারা পালন করতে পারেন? বরং কুফরী-শিরকীতে ভরপুর পহেলা বৈশাখকে রমনার বটমূলসহ সমূলে উচ্ছেদ করে দ্বীন ইসলাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা মুসলমান উনাদের জন্যে অতীব জরুরী।