কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর বিধানে পবিত্র শবে বরাত

কুরআন শরীফ-এর ভাষায় “শবে বরাতকে” “লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী” এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরাতকে “লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান” বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন, আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে  তথা শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান: আয়াত শরীফ ৩-৫)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম বিশেষ করে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ অর্থাৎ বরকতময় রাত্রি বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক তিনি এ রাতে সকল প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়সালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত তাফাসীর)

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রি যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী ক্বালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফ-এ বরাতের রাত্রকে “লাইলাতুম মুবারকাহ” আর হাদীছ শরীফ-এ “লাইলাতুন নিছফি মিন্‌ শা’বান” বলা হয়েছে।
কাজেই প্রত্যেক মুসলমান সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো তারা যেন শবে বরাত উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করে সরকারিভাবে সারাদেশে শবে বরাত পালন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।