কিছু সময় গাশ্তে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাড়িয়ে থাকার চেয়েও বেশী?ফযীলত।”???

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত গাশ্তের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “কিছু সময় গাশ্তে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাড়িয়ে থাকার চেয়েও বেশী ফযীলত।”

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর ও অবান্তর। এ ধরণের বক্তব্যের কোন অস্তিত্ব পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই।

মূলত শরীয়ত যে বিষয়ে কোন প্রকার ফযীলত বর্ণনা করেনি, সে বিষয়ে ফযীলত বর্ণনা করা কোরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে তথা শরীয়তের মধ্যে افراط- تفريط অর্থাৎ কমানো বাড়ানোর অন্তর্ভূক্ত, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।
তাছাড়া প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য শবে বরাত, শবে ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদ-এর প্রতি এহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অন্তর্ভূক্ত। কেননা শবে বরাত, শবে ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদের ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত, কিন্তু গাশ্ত তদ্রুপ নয় বরং তা মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত একটি নতুন পদ্ধতি।।

শবে বরাতের ফযীলত

মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুরা দুখানে বলেন,
حم والقران الحكيم انا انزلناه فى ليلة مبار كة انا كنا منزلين فيها بفرق كل امر حكيم امرا من عندنا انا كنا مر سلين.
অর্থ : “বিজ্ঞানময় কোরআন শরীফের কসম! নিশ্চই আমি বরকতময় রজনীতে কোরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি, আর আমিই মূলত নাযিলকারী। এই বরকতময় রজনীতেই আমার নিকট হতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ কাজের ফায়সালা করা হয়, আর আমিই মূলতঃ প্রেরণকারী।”

মুফাস্সিরীনয়ে কিরাম বলেন, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে “লাইলাতুল বরাত’’ বা শবে বরাতের কথা বলা হয়েছে। মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, মূলত লাইলাতুল বরাত হলো- লাইলাতুত্ তাজবীয (ليلةالتجويز) অর্থাৎ সব বিষয় ফয়সালা করার রাত্র।

আর লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে- লাইলাতুত তান্ফীয (ليلة التنفيذ) অর্থাৎ হুকুম জারী করার রাত্র, অর্থাৎ শবে বরাতে ফায়সালা করা হয় এবং শবে ক্বদর থেকে সেটা জারী করা হয়।

অতএব সূরা দুখানের উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ খানা শবে বরাতের জন্যই প্রযোজ্য। যেহেতু উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে, “এ রাত্রেই সব কিছুর ফায়সালা করা হয়।” (তাফসীরে দুররে মানছুর, মাযহারী, কুরতুবী ইত্যাদি।)

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, শবে বরাতের রাত্রেই বান্দার সব বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قا النبى صلى الله عليه وسلم هل تدرين مافى هذه الليلة قلت ما فيها يا رسول الله؟ قال فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه ا لسنة- وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে আয়শা! তুমি জান কি? এ পনের তারিখ রাত্রে অর্থাৎ বরাতের রাত্রে কি হয়?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “কি হয় ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম?” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এ বরাতের রাত্রে এক বৎসর কতজন সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, তা লিপিবদ্ধ করা হয় এবং এক বৎসর কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে, তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রেই বান্দার আমলসমুহ উপরে উঠানো হয় এবং এ রাত্রেই বান্দার রিযিকের ফায়সালা করা হয়।

লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المبار كة وليلة العيدين.
অর্থ : “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রে দোয়া কবুল হয়- (১) রজব মাসের পহেলা রাত্র, (২) শবে বরাতের রাত্র, (৩) শবে ক্বদরের রাত্র, (৪-৫) দু’ঈদের দু’রাত্র।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাতের ফাযায়েল-ফযীলত কোরআন শরীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

শবে ক্বদরের ফযীলত

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انا انزلناه فى ليلة القدر وما ادرك ماليلة القدر ليلة القدر خير من الف شهر.
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি ক্বদরের রাত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি। আপনি জানেন কি- ক্বদরের রাত্র কি? ক্বদরের রাত্র হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

লাইলাতুল ক্বদরের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ما تقدم من ومن قام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ما تقدم من ذئبه ومن قام ليلة القدر ايمانا احتسابا غفرله ما تقدم من ذنبه.
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমজানের রোযা রাখবে এবং রমজান মাসে তারাবীহর নামায আদায় করবে এবং লাইলাতুল ক্বদরে দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে, মহান আল্লাহ পাক তার পূর্ববর্তী সকল গুণাহ ক্ষমা করে দিবেন। (বোখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকছু ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)

আর পূর্বে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘শবে বরাতের ন্যায় শবে ক্বদরে দোয়া কবুল হয়।’
হাজরে আসওয়াদ”

মূলত হাজরে আসওয়াদ হলো- একজন হযরত ফেরেস্তা আলাইহিস সালাম, হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন বেহেশতে ছিলেন, তখন উনাকে বেহেশতের পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার গন্দম খাওয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর মহান আল্লাহ পাক উনাকে কা’বা শরীফে পাথররূপে স্থাপন করে দেন।

স্মরণযোগ্য যে, পাথরটি প্রথমে সাদা ছিল। মানুষ যখন উক্ত পাথরকে চুম্বন দেয়, তখন পাথর তার গুণাহলো চুষে নেয়। বান্দার গুণাহ্ চুস্তে চুস্তে সাদা পাথরটি কালো রঙে পরিণত হয়ে যায়। যার কারণে তাকে হাজরে আস্ওয়াদ বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نزل الحجر الاسود من الجنة وهو اشد بياضا من الين فسودته خطايا بنى ادم.
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নাযিল হয়েছে। তা (সর্ব প্রথম) দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। আদম সন্তানের গুণাহ্সমুহ তাকে কালো করে দিয়েছে।” (আহমদ, তিরমিযী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)

হাজরে আসওয়াদের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে,
عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الحجر والله يبعشنه الله يوم القيامة له عينان يبصربهما ولسان ينطق به يشهدعلى من استلمه بحق.
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজ্রে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন হাজ্রে আস্ওয়াদকে এমতাবস্থায় উঠাবেন যে, তার দু’টো চক্ষু থাকবে, যদ্বারা সে দেখতে পাবে এবং যবান থাকবে, যদ্বারা সে কথা বলবে। যে ব্যক্তি খালেছ নিয়তে তাকে চুম্বন করবে, তার জন্য সে সাক্ষী হবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক।)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত, শবে ক্বদর ও হাজরে আস্ওয়াদের ফাযায়েল-ফযীলত কোরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

এ প্রেক্ষিতে তাই প্রশ্ন উঠে যে, হাজ্রে আসওয়াদের এত ফযীলতের পর, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত তাবলীগ জামায়াতের গাশ্তকে কিরূপে তার চেয়েও বেশী ফযীলত পূর্ণ বলা যেতে পারে? এরূপ বক্তব্য বা মন্তব্য পেশ করা শবে বরাত, শবে ক্বদর ও হাজরে আসওয়াদের প্রতি এহানত বা অবমাননা নয় কি?

উল্লেখ্য, আক্বাইদের কিতাবে লেখা হয়েছে- “শরীয়তের কোন বিষয়কে এহানত করা কুফরী।”

কাজেই কোন আমলকে বিনা দলীলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আমলের ফযীলতের চেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ বলা যাবেনা।

তবে হ্যাঁ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত বা সম্পর্কযুক্ত কোন বিষয়কে স্থান বিশেষে অন্য আমলের উপর ফযীলত দেয়া যেতে পারে। যেমন দিয়েছেন- হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি বলেন- “লাইলাতুর রাগাইব” অর্থাৎ রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্র। যে রাত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর আব্বার পিঠ মোবারক থেকে আম্মার রেহেম মোবারকে তাশ্রীফ এনেছেন। সে রাত্রের মর্যাদা ও ফযীলত শবে বরাত ও শবে ক্বদরের চেয়েও বেশী।” (সুবহানাল্লাহ্)।
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলাতেই শবে বরাত ও শবে ক্বদরের সৃষ্টি।

মূলকথা হলো- “গাশতে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আস্ওয়াদ সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বেশী ফযীলত” প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ বক্তব্য খুবই আপত্তিকর, বিভ্রান্তি মূলক, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সাথে সামঞ্জস্যহীন এবং শরীয়তের বিষয়কে কমানো-বাড়ানোর শামিল হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। যা সুস্পষ্ট মিথ্যাচারিতার শামিল। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মিথ্যা বলার ভয়াবহ পরিণাম বর্ণনা করে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
انما الكذب لكل الذنوب لم.
অর্থ : “নিশ্চয়ই মিথ্যা সমস্ত গুণাহর মূল।”

মিথ্যাবাদীর মিথ্যার কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও পর্যন্ত দূরে সরে যান। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
اذا كذب العبد تباعد عنه الملك مبلا من نتن ما جاء به.
অর্থ : “যখন বান্দা মিথ্যা বলে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উক্ত মিথ্যা কথার দুর্গন্ধের জন্য তার নিকট হতে এক মাইল দূরে সরে যান।” (তিরমিযী শরীফ, মায়ারেফুস সুনান, তোহফাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাজী)
মিথ্যা বলা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা নহল শরীফ উনার ১০৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يفترى الكذب الذين لا يؤمنون.
অর্থ : “নিশ্চয়ই যাদের ঈমান নেই, কেবল তারাই মিথ্যা কথা বলে।”

আর এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
قيل لرسول الله صلى الله عليه وسلم ايكون المؤمن جبانا قال نعم- فقيل له ايكون المؤمن بخيلا قال نعم فقيل له ايكون المؤمن كذابا قال لا.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ঈমানদার ব্যক্তি কি ভীরু হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ হতে পারে। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো যে, ঈমানদার ব্যক্তি কি বখীল বা কৃপণ হতে পারে? তিনি বললেন হ্যাঁ হতে পারে। পুণরায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ঈমানদার ব্যক্তি কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি বললেন, না।” (মুওয়াত্তায়ে মালেক, বায়হাক্বী, আওযাযুল মাসালিক)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এ কথাই বুঝানো হয়েছে যে, মু’মিন ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তার পক্ষে মু’মিন থাকা সম্ভব নয়।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মু’মিন ব্যক্তির মধ্যে অন্য সকল দোষই অল্প বিস্তর থাকা সম্ভবপর, কিন্তু গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাত করা এবং মিথ্যা কথা বলার দোষ কিছুতেই থাকতে পারে না।” (আহমদ, বায়হাক্বী)

মিথ্যা কথা বলা শুধু কবীরা গুণাহ্ই নয় বরং কঠিন শাস্তির কারণ। যেমন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১০নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ولهم عذاب اليهم بما كانوا يكذبون.
অর্থ : “তাদের মিথ্যারোপের কারণে তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,
اما الرجل الذى رايته يشق شدته فكذاب يحدث با لكلبة فتحمل عنه حتى تبلغ الا فاق فيصنع به ما ترى الى يوم القيمة.
অর্থ : “হযরত জীব্রাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, আপনি যে ব্যক্তিকে দেখছেন যে, তার গাল কর্তন করা হচ্ছে সে একজন মিথ্যাবাদী। সে অমূলক ও মিথ্যা কথা প্রচার করতো। যা প্রচারিত হয়ে (দুনিয়ার) সমস্ত প্রান্তে পৌঁছতো। আপনি যে শাস্তি দেখছেন, ক্বিয়ামত অবধি তার প্রতি তা অব্যাহত থাকবে।” (সহীহ বোখারী, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী)

তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মিথ্যার বুরায়ী সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে,
عليكم بالصدق يهدى الى البر وان البر يهدى الى الجنة وما يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقا واياكم والكذب فان الكذب يهدى الى الفجور وان الفجور يهدى الى النار وما يزال الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عندا الله كذابا.
অর্থ : “তোমরা সত্য বলাকে ওয়াজিব করে নিও। নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা সৎকাজের পথ প্রদর্শন করে এবং নিশ্চয়ই সৎকাজ বেহেশতের পথ প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ছিদ্দীক (মহা সত্যবাদী) বলে লিখিত হয়। তোমরা মিথ্যা থেকে সতর্ক থাক এবং মিথ্যা থেকে বাঁচ। নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা গুণাহর দিকে ধাবিত করে। গুণাহ জাহান্নামের দিকে পথ প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টা করে, শেষ পর্যন্ত সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাজ্জাব বা মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী)

আর মিথ্যাবাদীরা সর্বদাই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
لعنة الله على الكاذبين.
অর্থ : “মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।”
সুতরাং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সকলের জন্যই উচিত, এ ধরণের অমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা।